পশ্চিমবঙ্গের ধামাখালি থেকে সম্প্রতি উদ্ধার হয়েছে ৯ কোটি টাকার জাল নোট, যা রাজ্যজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে দিয়েছে। প্রশাসনের দাবি, এটি শুধুমাত্র একটি স্থানীয় অপরাধ নয়, বরং একটি বৃহৎ আন্তঃরাজ্য জালনোট চক্রের অংশ। এই ঘটনার পর নিরাপত্তা বাহিনী ও তদন্তকারী সংস্থাগুলি চরম সতর্কতায় রয়েছে। কিভাবে এই বিশাল অঙ্কের জালনোট বাজারে আসছিল, ৯ কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার কারা এর পেছনে, আর এর প্রভাব কী হতে পারে — তা নিয়েই এই প্রতিবেদন।
কোথায় ও কখন ঘটল এই ঘটনা?
ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ধামাখালি এলাকায়, যা সুন্দরবনের অদূরে একটি নদীঘেঁষা অঞ্চল। স্থানীয় পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে একটি বিশেষ অভিযান চালায়। সেই অভিযানে একটি পরিত্যক্ত গুদামঘর থেকে উদ্ধার হয় এই বিপুল পরিমাণ জাল ভারতীয় মুদ্রা।
কী কী উদ্ধার হয়েছে ,৯ কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার?
ধামাখালির অভিযানে পুলিশ যে সামগ্রী উদ্ধার করেছে তা নিম্নরূপ—
₹৫০০ ও ₹২০০০ টাকার জাল নোট, যার মোট মূল্য প্রায় ₹৯ কোটি
ছাপার কাগজ, কালির বোতল, প্রিন্টার ও জাল নোট তৈরির নানা সরঞ্জাম
কয়েকটি পেন ড্রাইভ ও মোবাইল ফোন, যেখানে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের তথ্য রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে
কয়েকটি ফেক আধার কার্ড ও প্যান কার্ড
কারা যুক্ত এই চক্রে?
৯ কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই জালনোট চক্রে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি ছাড়াও বাংলাদেশের কিছু সন্দেহভাজনও জড়িত। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে:
শেখ রফিকুল ইসলাম (৩৮), স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী পরিচয় ব্যবহার করত
রাজু শেখ (৪২), বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে যাতায়াত করত
আরও ৩ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি, যাদের খোঁজ চলছে
🌐 আন্তর্জাতিক যোগসূত্র?
তদন্তকারী সংস্থাগুলি মনে করছে, এই চক্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জালনোট সিন্ডিকেট জড়িত। বাংলাদেশের খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চল থেকে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে জাল নোট পাচার করা হচ্ছিল বলে প্রাথমিক অনুমান।
🚨 কীভাবে কাজ করত এই চক্র?
জালনোট চক্রের কাজের ধরন ছিল বেশ চতুর ও গোপনীয়—
- উৎপাদন: ধামাখালির গোপন ঘরে তৈরি হত জাল নোট। অত্যাধুনিক প্রিন্টার ও স্ক্যানারের সাহায্যে আসল নোটের হুবহু নকল তৈরি করা হতো।
- পরিবহন: নদীপথ ব্যবহার করে নোটগুলো কলকাতা ও রাজ্যের অন্যান্য অংশে পৌঁছানো হতো।
- বাজারজাতকরণ: স্থানীয় বাজার ও চোরাকারবারির মাধ্যমে এই নোট ছড়িয়ে পড়ত বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে।
অর্থনীতির উপর প্রভাব
জালনোটের সংক্রমণ দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় মারাত্মক আঘাত হানে। এর প্রভাব নিম্নরূপ হতে পারে:
আসল নোটের উপর আস্থা কমে যায়
মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়
ব্যাংক ও আর্থিক সংস্থার ওপর চাপ পড়ে
বাজারে লেনদেনের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি তৈরি হয়
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক জানান, “আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। রাজ্য গোয়েন্দা ও কেন্দ্রীয় সংস্থার সাহায্যে তদন্ত চালানো হচ্ছে। যেকোনো মূল্যে চক্রের শিকড় খুঁজে বের করা হবে।”
রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর জন্য বিএসএফ ও কাস্টমসকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে।
📢 রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া,৯ কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতেও শুরু হয়েছে চাপানউতোর। বিরোধী দলগুলি রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে কাঠগড়ায় তুলেছে।
বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন,
“রাজ্যে জালনোটের চক্র দিন দিন বেড়ে চলেছে। প্রশাসনের ব্যর্থতাই এর জন্য দায়ী।”
অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়েছে,৯ কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার
“পুলিশ দক্ষতার সাথেই কাজ করছে। এই চক্রের গোড়া উপড়ে ফেলা হবে। রাজ্য সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে।”
অতীতের অনুরূপ ঘটনা
পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো জালনোট চক্রের জন্য বহুদিন ধরেই আলোচিত। অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে:
২০১৯ সালে মালদহে ৬ কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার হয়েছিল
২০২2 সালে বহরমপুরে এক বাংলাদেশি নাগরিক ধরা পড়েছিল ₹৩ কোটি জালনোটসহ
এনআইএ এর আগে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে একাধিক অভিযানে জালনোট চক্র ভেঙে দিয়েছে
বিশেষজ্ঞ মতামত
৯ কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার অবিশ্বাস্য
অর্থনীতিবিদ অরুণাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন:
“ভারতের জন্য জালনোট বড় সমস্যা। এগুলির মাধ্যমে শুধু অর্থনীতির ক্ষতি হয় না, বরং সন্ত্রাসবাদের অর্থায়নেও এর ব্যবহার হতে পারে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়িয়ে এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এর বিরুদ্ধে লড়তে হবে।”
করণীয় ও সতর্কতা ,৯ কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার
সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকতে হবে। সন্দেহজনক নোট পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাতে হবে।
দোকানদার ও ব্যাঙ্ক কর্মীদের জন্য বিশেষ ট্রেনিং দরকার যাতে তারা জাল নোট চিনে ফেলতে পারেন।
সরকারকে আরও শক্তিশালী মুদ্রা প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে যাতে নকল করা কঠিন হয়।
ধামাখালিতে্ ,অবিশ্বাস্য ৯ কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার , নিঃসন্দেহে বড়সড় সাফল্য প্রশাসনের পক্ষে। তবে এই ঘটনা প্রমাণ করে, রাজ্যে এখনও সক্রিয় রয়েছে জালনোট চক্র। তাই এদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। প্রশাসন, রাজনীতি, এবং সাধারণ মানুষ— সকলকেই সচেতন হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।