Period problems in women পিরিয়ডস মাঝে মাঝে হচ্ছে না?
মেয়েদের জীবনে মাসিক বা পিরিয়ড একটি স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। এটি শুধুমাত্র ঋতুস্রাবের অংশ নয়, বরং এটি স্বাস্থ্য এবং হরমোনের সঠিক ভারসাম্যের প্রতীক। তবে অনেক সময় মেয়েরা লক্ষ্য করেন যে তাদের পিরিয়ড নিয়মিত হচ্ছে না বা মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এটি স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগের কারণ হতে পারে। আর তাই আমরা আজ আলোচনা করবো পিরিয়ডস মাঝে মাঝে না হলে কি কারণ হতে পারে, লক্ষণগুলো কী, এবং কোন নিয়মগুলি ফলো করলে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
১. Period না হওয়ার প্রধান কারণ
পিরিয়ড না হওয়ার বা অনিয়মিত হবার কারণগুলো নানা রকম। এগুলোকে সাধারণত তিনটি বড় ভাগে ভাগ করা যায়—হরমোনাল সমস্যা, জীবনধারা ও মানসিক চাপ, এবং শারীরিক অসুস্থতা।
(ক) হরমোনাল সমস্যা
মেয়েদের দেহে পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণ করে মূলত হরমোন। এদের মধ্যে প্রধান হলো ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা হলে পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে যায়।
- থাইরয়েড সমস্যা: থাইরয়েড হরমোনের অপ্রতুল বা অতিরিক্ত মাত্রা পিরিয়ডে ব্যাঘাত ঘটায়।
- পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS): এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয় এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
- ওভার/আন্ডার প্রোডাকশন অব হরমোন: হরমোনের অতিরিক্ত বা কম উৎপাদন পিরিয়ডকে অনিয়মিত করে তোলে।
(খ) জীবনধারা ও মানসিক চাপ
আজকের ব্যস্ত জীবনযাত্রায় স্ট্রেস, অনিয়মিত খাবার, কম বা অতিরিক্ত ব্যায়াম—all these factors পিরিয়ডের উপর প্রভাব ফেলে।
- স্ট্রেস: মানসিক চাপ কোরটিসল হরমোন বৃদ্ধি করে, যা পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনকে প্রভাবিত করে।
- ডায়েট: পুষ্টিহীন খাদ্য বা খুব কম ক্যালোরি গ্রহণ পিরিয়ড বন্ধ করতে পারে।
- ওজনের পরিবর্তন: হঠাৎ ওজন কমানো বা বাড়ানো ওভুলেশন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।
(গ) শারীরিক অসুস্থতা
কিছু শারীরিক সমস্যা পিরিয়ড বন্ধ বা অনিয়মিত করতে পারে।
- ডায়াবেটিস
- এন্ডোমেট্রিয়োসিস
- উরোলজিক বা গাইনোকলজিকাল ইনফেকশন
২. Period অনিয়মিত হওয়ার লক্ষণ
পিরিয়ড অনিয়মিত হলে শরীর নানা ভাবে সংকেত দেয়। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- মাসিকের তারিখ বারবার পরিবর্তিত হওয়া
- রক্তপাতের পরিমাণ কম বা বেশি হওয়া
- হঠাৎ মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া
- বমি, মাথা ঘোরা বা শারীরিক দুর্বলতা
- পেটের ব্যথা, হাড়ের ব্যথা বা চুল পড়া
লক্ষণগুলো যদি নিয়মিত হয়, তবে এটি হরমোনাল বা স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করতে পারে।
৩. Period নিয়মিত রাখতে করণীয় নিয়মাবলী
পিরিয়ডের সমস্যা দূর করতে lifestyle ও diet পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু নিয়ম দেয়া হলো:
(ক) স্বাস্থ্যকর ডায়েট
- প্রচুর পানি পান করুন: দিনলেক্তে অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য: শাকসবজি, ফল, ও পুরো শস্য হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে।
- প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি: ডিম, মাছ, বাদাম, তেল—এইগুলো হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে।
- চিনি ও জাঙ্ক ফুড কমানো: অতিরিক্ত চিনি হরমোনকে প্রভাবিত করে।
(খ) নিয়মিত ব্যায়াম
- হালকা থেকে মাঝারি ব্যায়াম: হাঁটা, সাঁতার, যোগব্যায়াম।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত বা কম ওজন পিরিয়ডকে অনিয়মিত করে।
- স্ট্রেস কমানো: মেডিটেশন ও ডিপ ব্রিদিং পিরিয়ড নিয়মিত রাখতে সাহায্য করে।
(গ) পর্যাপ্ত ঘুম
- রাতে ৭–৮ ঘণ্টার ঘুম জরুরি।
- ঘুম কম হলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
(ঘ) মানসিক চাপ কমানো
- স্ট্রেস হরমোন কোরটিসল পিরিয়ডকে ব্যাহত করে।
- প্রতিদিন রিলাক্সেশন, প্রিয় হবি বা হালকা ব্যায়াম মানসিক চাপ কমায়।
(ঙ) নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
- থাইরয়েড চেক: হরমোন সমস্যার জন্য
- পেলভিক আল্ট্রাসাউন্ড: ওভারি ও ইউটেরাসের অবস্থা দেখতে
- রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে হরমোন লেভেল চেক
৪. প্রাকৃতিক উপায়ে পিরিয়ড নিয়মিত রাখা
(ক) হারবাল চা
- তুলসী চা: হরমোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- অ্যাডাপ্টোজেনিক হার্ব: যেমন আশ্বগন্ধা মানসিক চাপ কমায়।
(খ) হরমোন সমর্থক খাবার
- ফ্ল্যাক্সসিড, চিয়া সিড: ইস্ট্রোজেন ব্যালান্সে সাহায্য করে।
- সয়াবিন: প্রাকৃতিক ফাইটো-ইস্ট্রোজেন।
(গ) হালকা ম্যাসাজ
- পেটের নীচের অংশে হালকা ম্যাসাজ রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং পিরিয়ড নিয়মিত করতে সাহায্য করে।
৫. কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি
যদি এই নিয়মগুলো ফলো করার পরেও পিরিয়ড অনিয়মিত থাকে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষত নিচের অবস্থায়:
- ৩ মাসের বেশি Period না হওয়া
- অতিরিক্ত রক্তপাত বা খুব কম রক্তপাত
- প্রচণ্ড ব্যথা বা ক্লান্তি
- হঠাৎ ওজন কমা বা বাড়া
ডাক্তার থাইরয়েড টেস্ট, হরমোন টেস্ট এবং আল্ট্রাসাউন্ড করে কারণ নির্ধারণ করবেন। প্রয়োজন হলে চিকিৎসা বা হরমোন থেরাপি শুরু করা হবে।
৬. দৈনন্দিন রুটিনে সহজ নিয়ম
- প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমোয়া ও উঠা
- প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম
- মেডিটেশন বা শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম
- সুস্থ ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
- অতিরিক্ত কফি, চিনি ও জাঙ্ক ফুড এড়ানো
৭. মনের শান্তি ও পিরিয়ড
মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্য পিরিয়ডের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। ভালো মেজাজ, কম স্ট্রেস, এবং আত্মবিশ্বাসী মনোভাব পিরিয়ডকে স্বাভাবিক রাখে। হালকা হবি, গান শোনা, হালকা ঘোরাঘুরি—এসব পিরিয়ড নিয়মিত রাখতে সাহায্য করে।
Period
Period অনিয়মিত হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা, কিন্তু সঠিক জীবনধারা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক শান্তি বজায় রেখে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। যদি ঘরোয়া নিয়মাবলী অনুসরণ করার পরও সমস্যা থাকে, তবে অবশ্যই ডাক্তার বা গাইনোকলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে।
মেয়েরা নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে যত্ন নিলে Period নিয়মিত রাখা অনেক সহজ হয়ে যায়। তাই এই নিয়মগুলো ফলো করা শুরু করুন, স্বাভাবিক হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখুন, এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবন উপভোগ করুন।