কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থান: বিপ্লব না বিপদ?
২০৪৫ সালের মধ্যে অধিকাংশ চাকরি নেবে AI
২০৪৫ সালকে সামনে রেখে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-এর প্রভাব প্রতিনিয়ত বাড়ছে। স্মার্ট মেশিন, অটোমেশন, এবং এআই অ্যালগরিদম ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রশাসন, এবং অর্থনীতির নানা স্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে মানুষের অনেক চাকরি AI দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
McKinsey & Company-এর এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০৪৫ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ৭০% এর বেশি কাজ AI অথবা রোবোট দ্বারা পরিচালিত হবে। তবে, সব চাকরি AI ছিনিয়ে নিতে পারবে না। কিছু নির্দিষ্ট পেশা রয়ে যাবে মানুষের জন্যই নিরাপদ।
২০৪৫ সালের মধ্যে অধিকাংশ চাকরি নেবে AI
কোন তিনটি পেশা থাকবে নিরাপদ?
২০৪৫ সালের মধ্যে অধিকাংশ চাকরি নেবে AI,
বিশেষজ্ঞদের মতে, নীচের তিনটি ক্ষেত্র AI-এর আধিপত্যের মধ্যেও মানুষের উপরই নির্ভরশীল থাকবে:
১. সৃজনশীল পেশা (Creative Professions)
চিত্রশিল্প, সাহিত্য, অভিনয়, সংগীত – এ ধরনের সৃজনশীল কাজগুলিতে এখনও মানুষের আবেগ, অভিজ্ঞতা ও কল্পনার জায়গা AI পূরণ করতে পারে না। AI কবিতা লিখতে পারে বটে, কিন্তু মানুষের হৃদয় ছোঁয়া সৃষ্টির গভীরতা এখনও অনুপস্থিত। তাই লেখক, ডিজাইনার, চিত্রশিল্পী, পরিচালকদের পেশা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ।
২. মনোবিজ্ঞান ও কাউন্সেলিং (Psychology & Counseling)
এমন অনেক পেশা আছে যেখানে সহানুভূতি, মানবিক অনুভব এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা অপরিহার্য – যেমন: কাউন্সেলর, থেরাপিস্ট, মনোবিজ্ঞানী। একজন মানসিক রোগীকে বুঝে তার সমস্যার সমাধান করা AI-এর পক্ষে এখনো কঠিন। ফলে এই পেশাগুলি AI-এর দ্বারা পুরোপুরি প্রতিস্থাপিত হবে না।
৩. হাতে-কলমে মানবিক কাজ (Skilled Human-centric Professions)
নির্মাণ শ্রমিক, বাবুর্চি, দর্জি, চুল কাটার মতো পেশাগুলোতে নিখুঁত হাতে-কলমে কাজের দরকার হয়, যা কেবল মেশিনের দ্বারা করা কঠিন। বিশেষ করে, যেসব কাজে মানিয়ে চলার ক্ষমতা ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দরকার – যেমন প্লাম্বার, ইলেকট্রিশিয়ান, কিংবা কাস্টমাইজড শার্ট তৈরি, সেখানে AI এখনও পিছিয়ে।
AI কি সত্যিই বিপদ?
২০৪৫ সালের মধ্যে অধিকাংশ চাকরি নেবে AI,
AI যেমন সুবিধা দিচ্ছে, তেমনি কর্মসংস্থান নিয়ে শঙ্কাও বাড়াচ্ছে। কিন্তু এটাও ঠিক, নতুন AI-নির্ভর পেশার জন্মও হচ্ছে। যেমন: প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার, AI কনসালটেন্ট, রোবোটিক টেকনিশিয়ান ইত্যাদি।
তাই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে নতুন দক্ষতা অর্জনই ভবিষ্যতে টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি হবে।
২০৪৫ সালের AI যুগে যখন অধিকাংশ চাকরি ঝুঁকির মুখে, তখন এই তিনটি পেশা (সৃজনশীলতা, মানবিক সেবা, ও হাতে-কলমে নির্ভর পেশা) মানুষের আত্মিক গুণাবলির উপর নির্ভর করেই টিকে থাকবে। তাই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে হলে শুধু প্রযুক্তি নয়, মানবিক গুণাবলিও শাণিত করতে হবে।
ভারতের প্রেক্ষাপটে AI-এর প্রভাব
২০৪৫ সালের মধ্যে অধিকাংশ চাকরি নেবে AI
ভারতের মতো বৃহৎ জনসংখ্যার দেশে এআই (AI) প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি একদিকে নতুন সুযোগ তৈরি করছে, আবার অন্যদিকে সাধারণ চাকরিজীবীদের জন্য তৈরি করছে উদ্বেগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৪৫ সালের মধ্যে ভারতে প্রায় ৩০ কোটির বেশি চাকরি AI বা অটোমেশন প্রযুক্তির কারণে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
বিশেষ করে BPO, কাস্টমার কেয়ার, ডেটা এন্ট্রি, অ্যাকাউন্টিং, এবং ব্যাংকিং সেক্টরের অনেক কাজ AI দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে। কারণ এই কাজগুলো নিয়মভিত্তিক এবং স্কেলিং সহজ – AI খুব দ্রুত ও নির্ভুলভাবে এই দায়িত্বগুলো পালন করতে পারে।
ভারতীয় গ্রামীণ ও আধা-শহুরে জনপদের বাস্তবতা
ভারতের গ্রামীণ এবং টিয়ার-২/টিয়ার-৩ শহরগুলোতে এখনও বহু মানুষ কৃষি, হস্তশিল্প, পরিবহন, নির্মাণ, ছোট ব্যবসা ও পরিষেবা-নির্ভর কাজের উপর নির্ভর করেন। এই কাজগুলো এখনো AI পুরোপুরি দখল করতে পারেনি। তবে শহরাঞ্চলে, বিশেষ করে IT ও কর্পোরেট দুনিয়ায়, AI-এর প্রভাব দ্রুত বাড়ছে।
ভারতীয় তরুণদের জন্য ভবিষ্যতের পরামর্শ
ভারতের যুব সমাজকে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। কেবল কলেজের ডিগ্রি যথেষ্ট নয়, Skill India Mission বা Digital India Programme এর মতো ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
যে দক্ষতাগুলো জরুরি:
২০৪৫ সালের মধ্যে অধিকাংশ চাকরি নেবে AI,
- প্রোগ্রামিং (Python, Java, etc.)
- ডেটা সায়েন্স ও AI
- ডিজিটাল মার্কেটিং
- ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইন
- ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট ক্রিয়েশন
- পাবলিক স্পিকিং ও কমিউনিকেশন
AI যুগে ভারতের জন্য সম্ভাবনার দিক
এআই-এর কারণে কেবল চাকরি হারানোর কথা নয়—ভারতের মতো দেশগুলোতে AI যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও পরিবহন খাতে অভাবনীয় উন্নতি সম্ভব। যেমন:
২০৪৫ সালের মধ্যে অধিকাংশ চাকরি নেবে AI,
AI দ্বারা ফসলের রোগ শনাক্তকরণ ও পূর্বাভাস
রিমোট এলাকায় টেলি-মেডিসিন সুবিধা
ডিজিটাল শিক্ষায় ব্যক্তিগতকৃত লার্নিং
ট্র্যাফিক ও স্মার্ট শহর ম্যানেজমেন্ট
২০৪৫ সালের AI যুগে ভারতের মতো বিশাল জনসংখ্যার দেশে নতুন চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা পাশাপাশি চলবে। যারা দ্রুত শেখার মানসিকতা ও প্রযুক্তি গ্রহণের ক্ষমতা রাখেন, তাদের জন্য AI যুগ আসলে সুযোগের নতুন দরজা খুলে দেবে